হেতমপুর ও এক বাদশাহী প্রেমগাঁথা।
![]() |
শেরিনা বিবির সমাধি। |
প্রাক কথন:- আজকের রাঢ় ভূমির যে অংশটি বীরভূম নামে প্রচলিত, সেই অঞ্চলের এই নামকরণ হয় সম্ভাব্যরূপে খ্রিস্টীয় দ্বাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে। ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার এবং আরো অনেক ঐতিহাসিকরা এমন ধারণা পেষণ করেন। এঁদের মতে বীরভূমের প্রথম রাজার নাম সম্ভবত বীরসিংহ এবং তাঁর রাজধানী সম্ভাব্যরূপে ছিল রাজনগরে।
" রামচরিত" কাব্যে বীরসিংহ নামক রাজার কোন উল্লেখ সন্ধ্যাকর নন্দী বা তাঁর টীকাকারা উল্লেখ করেননি। তবে সিউড়ি সদর থেকে কিছু দূরে ভ্যান্ডিরবন নামক স্থানে বীরসিংহপুর নামক গ্রামটিকে, স্থানীয়রা বীরসিংহ রাজার ভগ্ন রাজপ্রাসাদ বলে উল্লেখ করেন।
বর্তমানে বীরভূম নামে কোন গ্রাম নেই। তবে মুঘল জমানার একটি মানচিত্রে বীরবন নামক স্থানের উল্লেখ আছে। আবার একই মানচিত্রে জোবরাদপুর নামক গ্রামের উল্লেখ আছে। এই জোবরাদপুরই কি বর্তমানের দুবরাজপুর ? অনেকে বলেন মল্ল রাজাদের উপাধি- (মান, সিংহ, বরা, শূর, ধল বাদে ) বীর থেকেও বীরভূম নামের উৎপত্তি হবার সম্ভাবনা কারণ আমরা দেখেছি মানভূম, সিংভূম, বরাভূম, ধলভূম ইত্যাদি স্থান নাম। তবে বীরভূমের প্রাচীন নাম কিন্তু কামকোটি।
তুর্কি অনুপ্রবেশকারী মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর পরে ১২০৬ সালে বাংলার সুলতান হন মোহাম্মদ সিরান খিলজী। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বীরভূম জেলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু রাজনগরের ক্ষুদ্র রাজারা সর্বদাই ছিলেন প্রায় স্বাধীন নৃপতি।
১৬০০ সালে আসাদুল্লাহ খান এবং জুনায়েদ খান নামক দুই পাঠান সহোদর ভাই, রাজনগর রাজার দরবারে চাকরি নেন। কিন্তু তাঁরা ছিলেন উচ্চাভিলাষী। শুধু রাজার মন জয় করাই নয়, জুনায়েদ খান তাঁর সুদর্শন, আফগান চেহারার প্রেমজালে , রানীকে বশ করে নেন এবং এক সুবর্ন মুহূর্তে রাজা এবং তার আপন ভাই আসাদুল্লাকে জলে ডুবিয়ে হত্যা করেন। শুরু হয় রাজনগরে পাঠান রাজ। ভারত এবং বাংলাতে তখন মুঘল জমানা, কিন্তু রাজনগরের পাঠান রাজারাও সর্বদা তাঁদের স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।
জুনায়েদ খানের নাতি খাজা কমলের (১৬৫৯-১৬৯৭) সময়ে জনৈক ব্রাহ্মণ সন্তান রাঘবেন্দ্র রায়, চাকুরীর খোঁজে উনার দরবারে আসেন। রাঘবেন্দ্র রায় এদিকে ব্রাহ্মণ, অন্যদিকে আবার অসামান্য তরোয়াল নির্মাণ করা ও তরোয়াল খেলায় পারদর্শী ছিলেন। তাই গুণীর সন্মান করে খাজা কমল তাঁকে যথোপযুক্ত সন্মান দিয়ে নিয়োগ করেন। এই ব্যাপারটি তাঁর পুত্র আসাদুল্লা খাঁ মেনে নিতে পারেননি। তাই খাজা কমলের মৃত্যুর পরে ১৬৯৭ সালে একদিকে আসাদুল্লা খাঁ নবাব হন, অন্যদিকে রাঘব রায় রাজনগরের চাকরি ছেড়ে দিয়ে, বীরভূমের হেতমপুরের (শের শা সুরি নির্মিত) দুর্গের কাছে নিজ বসতি স্থাপন করেন। উনার ব্যবহার ও চরিত্র গুনে আকৃষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অনেক গরিব মানুষ এখানে আসতে থাকেন, এবং একটি ক্ষুদ্র পল্লী গড়ে ওঠে। এই অঞ্চলের নামই হয়ে যায় রাঘবপুর।
এদিকে ১৭১৮ সালে আসাদুল্লা খাঁ মারা যান এবং তাঁর পুত্র বদিউজ্জামান খান রাজনগরের অধিপতি হন(১৭১৮-১৭৫১)। রাঘবপুর তখন জমজমাট পল্লী এবং রাঘব বেড়া নামক মনোরম উদ্যানে অনেকেই ভ্রমণ ও শিকার করতে আসতেন। রাজনগর রাজের, এক কর্মচারী, শা-আলমপুরের তহশীলদার এখানে শিকার করতে এসে এক সুন্দরী গ্রাম্য নারীকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এই নিয়ে রাঘব রায়ের প্রজাদের সঙ্গে তহশীলদারের লোকলস্করের মারপিট হয়। মার খেয়ে তহশীলদার তো পলায়ন করেন, কিন্তু রাজনগরে খবর পাঠান, রাঘবেন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য।
খবরের সত্যাসত্য যাচাই না করেই, রাঘব রায়কে শায়েস্তা করবার জন্য কোম্মর খাঁ নামক জনৈক পাঠান সর্দার কে নিয়োগ করা হয়। কোম্মর খাঁ ব্যর্থ হলে হাতেম খাঁ নামক জনৈক বিচক্ষণ ও কূটবুদ্ধিসম্পন্ন রাজকর্মচারীকে, বিদ্রোহ দমন করার কাজে নিয়োগ করা হয়।
হাতেম খাঁ তিনবছর ধরে রাঘবপুরের মাটি কামড়ে থেকে, বিদ্রোহ দমন করেন। নতুনভাবে প্রজাসত্ব বিলি করেন, ক্রমে ক্রমে আবার সেই পরিত্যক্ত রাঘবপুর, দুইশত মনুষ্যের এক ক্ষুদ্র পল্লীর রূপ ধারণ করে। রাঘব রায় নিরুদ্দেশ হয়ে যান। হাতেম খাঁ র নামে, রাজনগর রাজ বদিউজ্জামান খান, এই নতুন পল্লীর নাম দেন- হাতেমপুর, যা আজকের হেতমপুর এবং হাতেম খাঁ কে এই অঞ্চলের নি:শুল্ক জায়গীর দান করেন।
নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ হাতিম খাঁ, অকালেই তাঁর স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে হারিয়েছিলেন, এর বেশি আর কিছু জানা যায়নি। তাই হাতেম খাঁও মনস্থির করেন, বাংলার এই নির্জন পল্লীতেই জীবনের বাকি কটা দিন কাটিয়ে দেবেন।
এইখান থেকেই আমাদের ঐতিহাসিক গল্পের শুরু। আর হ্যাঁ ! আরেকটি চরিত্রের কথা একটু বলতে হয়, যিনি বাংলায় না থেকেও আছেন। তিনি সেই সময়ের দিল্লীর বাদশা। যদিও কোথাও তাঁর নাম লেখা নেই, তবে স্থান-কাল-পাত্র খুঁজলে মনে হয় এই বাদশা হচ্ছেন আল গোহর বা সম্রাট শাহ আলম ২(১৭২৮ - ১৮০৬)। ইতিহাসে দেখছি তাঁর পাঁচজন স্ত্রী, ১৬ র অধিক পুত্র এবং ২ কন্যা ছিল। দুই কন্যার একজনই খুব সম্ভব আমার গল্পের নায়িকা। সেই সময়ের প্রচলিত সাধু ভাষায় আমার এই কাহিনী নিবেদন করছি।
![]() |
হাঁফেজ খাঁর বাঁধ |
গ্রীষ্মের এক খরতপ্ত দ্বিপ্রহর। বৃদ্ধ হাতেম খাঁ একাকী বসিয়া আছেন তাঁহার কাছারি গৃহের একপ্রান্তে, ঘন শাখাচ্ছাদিত এক আম্র বৃক্ষের নিম্নে। মৃদু মৃদু সমীরণে, বৃদ্ধের চক্ষু নিমিলিত হইয়া আসিতেছিল। দ্বিপ্রহরের এই সময়ে প্রজাগণ ও কর্মচারীবৃন্দ আপন আপন ভবন গমন করত, ভরপেট ভোজন করিয়া সম্ভবত সুখনিদ্রা দিতেছেন। অর্ধ নিমিলিত চক্ষে বৃদ্ধ যেন দেখিতে পারিলেন, এই অগ্নিময় প্রান্তরের মধ্য দিয়া দুরাগত দুটি ফুটকি যেন ক্রমশ তাঁহার গৃহপ্রাণেই অগ্রসর হইতেছে। এই প্রখর গ্রীষ্মে যেখানে কাকপক্ষী চক্ষে পরে না, বিড়াল কুকুর অবধি কোথায় যেন পলায়ন করিয়াছে, সেখানে ইহারা কি উদ্দেশ্যে হেথায় আসিতেছে ?
বৃদ্ধের উৎসুক্য নির্বাপিত করিয়া, দুইটি মূর্তি, একটি পুরুষ-অন্যটি নারী, তাঁহার কাছারির অঙ্গনে আসিয়া উপস্থিত হইল।
বৃদ্ধ দেখিলেন অপরুপ সুন্দরকান্তি দুইটি মূর্তি। পুরুষটি দীর্ঘকায়, শুভ্রবর্ন, উন্নত নাসা, রাজপুরুষের ন্যায় চেহারা। আর নারী মূর্তিটির দিকে চাহিয়া স্তম্ভিত হইতে হয়। রাজদরবারে, রাজকার্য উপলক্ষে হাতেম খাঁ জীবনে অনেক সুন্দরী নারী দেখিয়াছেন। কিন্তু তাঁহাদের মধ্যে কেহই এই অল্পবয়সী মেয়েটির সম্মুখে দাঁড়াইতেই পারিবে না।
প্রকাশ পাইল, ইঁহারা দুইজনে আসিতেছেন পাটনা হইতে, গন্তব্য মুর্শিদাবাদ। পুরুষটির তাঁহার নাম উল্লেখ করিলেন- হাফেজ খান, সঙ্গের মেয়েটি তাঁহার পত্নী শেরিনা বিবি। ইহাও প্রকাশ হইল যে, হাফেজ একদা দিল্লীর সুলতানের দরবারে সৈনিকের কর্ম করিতেন। কিন্তু কোন এক বিশেষ কারণে কর্ম হইতে ইস্তফা দিয়া, ভাগ্যান্বেষণে চলিয়াছেন মুর্শিদাবাদ।
বৃদ্ধ নিজের পরিচয় জানাইতে গিয়া , বুঝিতে পারিলেন যে, হাফিজ ও তাঁহার সঙ্গিনী হাতেম খাঁ র সম্মন্ধে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। পদব্রজে আসিবার সময়ে ইনারা গ্রাম্য লোকেদের নিকট হইতেই হাতেম খাঁ এবং হাতেমপুর সমন্ধে অবগত হইয়াছেন।
স্ত্রী-পুত্র-কন্যাহীন হাতেম খাঁ , সানন্দে এই দম্পতিকে নিজঘরে স্থান দিলেন। হাতেম খাঁ হইলেন শেরিনা বিবির আব্বাজান।
হাতেম খাঁর তৃষিত পিতৃহৃদয়, শেরিনা ও হাফিজের উপস্থিতিতে আনন্দে ভরিয়া উঠিল। হাফিজ ও শেরিনা, এই পিতৃসম বৃদ্ধের কাছে আর কোন কথা লুকাইলেন না। তখন প্রকাশিত হইল যে, শেরিনা বিবির আসল নাম আমিনা বিবি এবং তিনি দিল্লীর সুলতানের কন্যা। আর হাফিজ আদতে দিল্লীর মোগল সেনাপতির পুত্র। বাল্যকাল হইতেই ইঁহাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক থাকায়, ইঁহারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, যেভাবেই হোক এই প্রেমের পূর্ন পরিণতি, বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হইবেন। কিন্তু দিল্লীর বাদশা বংশমর্যাদা রক্ষার নামে তাঁহার ভ্রাতুষ্পুত্র(মতান্তরে উনার এক বিবির ভ্রাতুষ্পুত্র) হোসেন শার সঙ্গে বিবাহ দিবার জন্য মনস্থির করেন। হোসেন শার মতন পাষন্ড জগতে খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর। তাই তাঁহারা দুই বৎসর পূর্বে একজন বিশ্বস্ত মোল্লার সাহায্যে গোপনে বিবাহ করিয়াছেন এবং হোসেন শাহের লম্পট দৃষ্টি হইতে পরিত্রাণ পাইবার নিমিত্তে দেশে বিদেশে ছদ্মনামে ও ছদ্মসাজে , প্রাণ বাঁচাইতে ঘুরিয়া বেড়াইতেছেন।
হাতেম খাঁ পুনঃপুনঃ তাঁহাদের আশ্বাসিত করেন যে, হাতেম খাঁ বাঁচিয়া থাকিতে, কেহই ইঁহাদের কোন ক্ষতি করিবার সাহস রাখিবেনা। হেতমপুরের এই অজ্ঞাত স্থানে, তাঁহারা নিশ্চিন্তে সংসার করিতে পারিবে।
দুর্ভাগ্যবশত ইহার কিছু দিনের মধ্যেই হাতেম খাঁ গুরুতর অসুস্থ হইয়া পড়িলেন। এদিকে শেরিনা বিবিও সন্তান সম্ভবা। অসুস্থতার মধ্যেও হাতিম খাঁ নিজ স্বাক্ষরিত ও সিলমোহর যুক্ত এক পত্র রাজনগরের অধিপতি বদিউজ্জামান খানের কাছে প্রেরণ করেন। পত্রের বক্তব্য এইমত ছিল, হাতেম খাঁ বৃদ্ধ হইয়াছেন এবং গুরুতর অসুস্থ, তাই তাঁহার অবর্তমানে হাতেমপুর জায়গীরটি যেন হাফেজ খাঁর নামে বন্দোবস্ত করিয়া দেওয়া হয়।
শত চেষ্টা করিয়াও হাতেম খাঁকে বাঁচান সম্ভব হইল না। এদিকে প্রতিহিংসার জালে জ্বলিতে জ্বলিতে দিল্লী হইতে হোসেন শা- মুসলিম ফকিরের ছদ্মবেশে শেষ অবধি হাতেমপুরে আসিয়া আমিনা ও হাফিজের সন্ধান পাইলেন। শেরিনা বিবি তখন সদ্য একটি পুত্র সন্তান প্রসব করিয়া অত্যন্ত দুর্বল হইয়া ছিলেন।
সালটি তখন ১৭৪২, মারাঠা সেনাপতি রঘুজী ভোঁসলের চল্লিশ শতাধিক অশ্বারোহী সৈনিক তখন লুটতরাজ চালাইয়া সমগ্র বাংলায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন, যাহা বর্গী আক্রমণ নামে কুখ্যাত। ইনার দুইজন সেনাপতি ছিল, হিন্দু সেনাপতি ভাস্কর পন্ডিত এবং মুসলিম সেনাপতি মীর হাবিব। আলীবর্দীর সঙ্গে মারাঠাদের যুদ্ধের সময়, মীর হাবিব মাত্র ৫০০ মারাঠা সৈনিক লইয়া, অতর্কিতে মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করিয়া, প্রচুর সম্পত্তি লুন্ঠন করেন যাহার মধ্যে কেবল জগৎ শেঠের কাছ হইতেই দুই কোটি টাকা পাওয়া গিয়াছিল।
![]() |
শেরিনা বিবির সমাধি সৌধ । |
সেই সময় বর্গীর দল সিউড়ির নিকটবর্তী কেন্দুয়া ডাঙ্গা নামক স্থানে ঘাঁটি করিয়া বসিয়া আছে। পাষণ্ড হোসেন শা বর্গী শিবিরে যাইয়া নিজ পরিচয় জ্ঞাপন করিয়া প্রথমে মীর হাবিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে মীর হাবিবের সহযোগিতায় ভাস্কর পন্ডিতকে বুঝাইতে সক্ষম হন যে, শেরিনা বিবি দিল্লির বাদশার কোটি কোটি টাকার হীরা-জহরত লইয়া পলাইয়া আসিয়াছে। গভীর রাত্রে আক্রমণ করিলে, সেই সমস্ত জহরতের মালিক হইবেন, মারাঠা দল। হোসেনের খালি শেরিনা বিবিকে চাই।
কাল্পনিক হীরে জহরতের লোভে, নিশুতি রাতে শেরিনা ও হাফিজ খানের গড় আক্রমণ করে মারাঠা বর্গীরা। হোসেন শা এবং মীর হাবিব কাপুরুষের মতন পশ্চাদদিক হইতে বল্লম ছুড়িয়া হাফিজ খানকে হত্যা করেন। উম্মুক্ত অসি হস্তে শেরিনা বিবি শত্রু শিবিরে প্রবেশ করে। এই রণরঙ্গিনী নারী মূর্তি দেখিয়া, ভাস্কর পন্ডিতের মনে মা ভবানীর কথা উদয় হয় এবং তাঁহার নির্দেশে মারাঠা সৈনিকেরা এই স্থান পরিত্যাগ করেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পাষন্ড হোসেন শা, আমিনা ও হাফিজের কথা দিল্লীর বাদশাহের কানেও পৌঁছিয়া দিয়াছিল এবং দিল্লীর বাদশাহের নির্দেশে ইঁহাদের গ্রেফতার করিবার জন্য রাজনগর হইতে একদল সৈনিক এইসময় আসিয়া উপস্থিত হন। আর পাষন্ড হোসেন শার লোভী হস্ত শেরিনা বিবির দিকে ক্রমশ অগ্রসর হইতেছে। দুনিয়ার সমস্ত সুন্দরী নারীই তো আর নুরজাহান নন। শেরিনা বিবির মতন সতীত্ব ও প্রেমে উজ্বল নারীও আছেন। শেরিনা বিবি ততক্ষণে নিজের কর্তব্য স্থির করিয়া নেন। ক্ষণকালের জন্য মৃত হাফিজের দেহকে জড়িয়া ধরিয়া এক মর্মান্তিক আর্তনাদ করিয়া উঠিলেন। পরমুহূর্তেই তাঁহার ও হাফিজের প্রেমের চিন্হ , দুধের শিশুকে কোলে লইয়া, অঙ্গন মধ্যস্থিত পুষ্করিণীতে ঝাঁপ দিয়া বীরাঙ্গনাদের ন্যায় মৃত্যু বরণ করেন।
![]() |
শেরিনা বিবির সমাধি । |
উপসংহার:- হেতমপুর গ্রামের একেবারে দক্ষিণ সীমানায় এক বিশাল মাঠ বর্তমান। স্থানীয়রা অনেক বলেন গড়ের মাঠ। এখানেই, বন বিভাগের ডাক- বাংলোর কাছেই আছে বীরাঙ্গনা " শেরিনা বিবির সমাধি"। এর কাছেই দেখতে পাবেন প্রজানুরঞ্জনের জন্য হাফেজ খাঁ র নির্মিত হাফেজ খাঁঁর বাঁধ। এখানেই কোথাও ছিল প্রাচীন হেতমপুর গড়। হাফিজ খাঁর সমাধি খুঁজে পাইনি। তবে শেরিনা বিবি ও তাঁর পালক পিতা , হেতমপুরের প্রতিষ্ঠাতা হাতেম খাঁর সমাধি দর্শনের সৌভাগ্য হয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. The Annals of Rural Bengal(2nd edition), Vol-I, William Wilson Hunter.
2. কিশোরীলাল সরকার প্রণীত হেতমপুর কাহিনী। রাঢ় প্রকাশন, সিউড়ি।
3. বীরভূম জেলার পুরাকীর্তি, দেবকুমার চক্রবর্তী। পূর্ত বিভাগ: পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
4. বীরভূম জেলার গ্রামনাম, ডঃ সত্যনারায়ণ দাস। তারাপদ সাঁতরা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, গোপালমঠ, দুর্গাপুর
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া।
ReplyDeleteসমৃদ্ধ হলাম।
ReplyDeleteকত অজানাকে জানলাম
ReplyDelete