গোলকুন্ডা দুর্গ এবং এক শাহী প্রেমকথা।
( xbhagmati-pagespeed-ic-fxdlpoikak.jpg)
ভারতীয় নারী। ঈশ্বরের বোধহয় সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।তাঁর আছে হরিণীর মতন কালো চোখ, প্রেমিকের জন্য সমুদ্র অতল গভীর ভালোবাসা, অসম্ভব সুন্দর একটি মন এবং মনন।এই কাজল নয়না হরিণীর চোখ, চুম্বকের মতন টেনে নিতে পারে যে কোন পুরুষকে।আর তাঁদের প্রেমের গভীরতা - জন্ম দিয়েছে কত গান, কত লোককথা, কত উপন্যাসের।
"তোমার সৌন্দর্যদূত যুগ যুগ ধরি এড়াইয়া কালের প্রহরী,
চলিয়াছে বাক্যহারা এই বার্তা নিয়া - ভুলি নাই, ভুলি নাই, ভুলি নাই প্রিয়া। "
এ কথা শুধু শাহজাহানের ক্ষেত্রে নয় , এর সত্যতা পাওয়া যায় দেশজুড়ে প্রচলিত অসংখ্য ধ্রুপদী প্রেমগাঁথার মধ্যে। সে গোলকুন্ডার ভাগমতি-কুলি কুতুব শাহের উপাখ্যান হতে পারে, মান্ডুর রূপমতি- বাজবাহাদুরের হতে পারে, কুলি কুতুবের নাতি আবদুল্লা কুতুব শাহ এবং তারামতির হতে পারে ।
গোলকুন্ডা বলতেই আসে হায়দরাবাদ শহরের কথা । আর হায়দরাবাদের ল্যান্ডমার্ক কি জিজ্ঞেস করলে সবাই একবাক্যে উত্তর দেবেন জানি চারমিনার।চারমিনার কে তৈরি করেছেন জানেন ? চতুর্থ কুতুবশাহী সুলতান কুলি কুতুব শাহ-১৫৯১ এ শুরু করে ১৫৯২ এ শেষ করেন। ইনি ছিলেন এক ব্যাতিক্রমী সুলতান, কোন আনন্দ বা যুদ্ধজয়ের স্মৃতিতে এই অসাধারণ সৌধটি তৈরি হয়নি। সেই সময় গোলকুন্ডা এবং হায়দ্রাবাদে প্লেগের প্রাদুর্ভাবে ভয়ঙ্কর মড়ক দেখা দেয়।সম্রাট আল্লার কাছে দোয়া করেন তাঁর প্রজাদের প্রানরক্ষার জন্য।প্লেগের প্রাদুর্ভাব বন্ধ হলে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি আল্লার কাছে দোয়া মাঙ্গেন , ঠিক সেই স্থানেই এই অসাধারণ স্থাপত্য কীর্তিটি তৈরি করেন।
চলুন যাই কুতুবশাহী রাজবংশের রাজধানী গোলকুন্ডা দুর্গ দর্শনে। এই দুর্গ সম্ভবত ৯৪৫-৭০ খ্রিস্টাব্দে তৈরী হয় কাকাতিয় রাজাদের হাতে। সেটি তখন ছিল মাটির কেল্লা।যে পাহাড়ের চূড়ায় এই কেল্লার অবস্থান তার নাম "মঙ্গলা ভরম" পাহাড়। এর বহুপরে ১১৪৩ সালে একটি রাখাল বালক পশুর পাল চড়াবার সময় এই মঙ্গলাভরম পাহাড়ের চূড়ায় একটি গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল।খেলার ছলে গাছের ডাল নিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে বেরিয়ে পড়ে এক দেবমূর্তি।ক্রমে ক্রমে এই মূর্তির কথা কাকাতীয় রাজ রাজা প্রতাপ রুদ্রের কানে যায়।রাজা এই স্থানটিকে পবিত্র ও সৌভাগ্যের আলয় মনে করেন এবং মাটির কেল্লাকে আরো শক্ত পোক্ত করে গড়ে তোলেন এবং নামকরণ করেন গোল্লাকোন্ডা। তেলেগু ভাষায় গোল্লা মানে রাখাল আর কোন্ডা হচ্ছে পাহাড়।
এই 'গোল্লাকোন্ডা'ই লোকমুখে হয়ে দাঁড়াল গোলকুন্ডা।১৩৬৩ সালে কাকাতীয় রাজা কৃষ্ণদেবের কাছ থেকে এই দুর্গ বাহমনি সম্রাট মহম্মদ শাহের হস্তগত হলে দুর্গের নতুন নামকরণ হয় মহম্মদনগর। তবে এই দুর্গ পরবর্তীতে আবার দখলে যায় হিন্দু রাজা মুসুনারি নায়েকের হাতে। উনার উত্তরপুরুষ মুসুনারি কাপায়া নায়ক ১৪৬৪ সালে দুর্গকে বাহমনি সম্রাটদের কাছে প্রত্যর্পণ করেন।
কালের ফেরে ১৫১৮ সালে বাহমনি সম্রাট মেহেমুদ শাহের সুবেদার কুলি কুতুব শাহ স্বাধীনতা ঘোষণা করে স্বাধীন কুতুবশাহী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। গোলকুন্ডা দুর্গ হয় এই রাজবংশের রাজধানী। এই রাজবংশের আদি নিবাস ছিল সম্ভবত তুরস্ক (Britannica)।
চলুন ঘুরে দেখি গোলকুন্ডা দুর্গ।
আমরা ঢুকব প্রধান দূর্গতোরণ বা ফতেহ দরওয়াজা দিয়ে। বাপরে সে কি বিশাল দরজা, মজবুত লোহার ফ্রেমে তৈরি, অসংখ্য লোহার শলাকা গাঁথা, হাতিও মাথা দিয়ে দরজা ভাঙতে পারবে না।এরকম পরপর আটটি মজবুত দরজা পেরিয়ে পৌঁছুতে হত বালাহিসার বা দরবার হলে।মঙ্গলাভরম পাহাড়ের ৫ বর্গ কি:মি: জায়গা জুড়ে তিনধাপে তিনটি প্রাচীর দিয়ে মজবুত করে নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়েছিল। প্রতিটি দরজায় এবং গ্রানাইট পাথরের দেওয়ালের ফুটো দিয়ে ফুটন্ত তেল এবং গলানো সিসে, শত্রুপক্ষের দিকে ঢেলে দেওয়া হতো।আর প্রাচীরের সঙ্গে সংযুক্ত উঁচু উঁচু গম্বুজ, সেনারা সেখানে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ নজরদারি করছেন, আর প্রাচীরের প্যারাপিটে রাখা সারি সারি কামান। গোলকুন্ডা দুর্গের নিরাপত্তা এতই দুর্ভেদ্য ছিল যে ১৬৮৭ সালে আওরঙ্গজেব ৮ মাস ধরে চেষ্টা করেও গোলকুন্ডা জয় করতে পারেননি। অবশেষে ঘুষ দিয়ে সরণদাজ খান নামক বিশ্বাসঘাতক নিয়োগ করে তিনি রাতের অন্ধকারে গোলকুণ্ডায় প্রবেশ করেন।
১৫১৮ থেকে ১৬৮৭ কুতুবশাহী সুলতানদের সর্বমোট শাসনকাল।প্রথম তিনজন সুলতান তাঁদের ৬২ বছরের শাসন কাল কাটিয়ে দিয়েছিলেন কুতুবশাহী সাম্রাজ্য এবং গোলকুন্ডা দুর্গের নিরাপত্তা সুরক্ষা সুদৃঢ় করার কাজে। আসলে তখন সারা পৃথিবীর রাজা বাদশা, ব্যাবসায়ী, তস্কর, লুটেরা- সবাই লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গোলকুন্ডার পানে।এর কারণও ছিল- সারা পৃথিবীতে তখন একটাই হিরের খনি, গোলকুন্ডার কাছে কল্লুর এ।আর কতসব পৃথিবী বিখ্যাত হিরে এক এক করে বেরোচ্ছে সেই খনি থেকে- "কোহিনুর", পারস্য রাজের রাজমুকুটের "দরিয়া-ই-নূর", মাগ্নিফিসেন্ট " দা হোপ", এবং আরো কত শত।
কুতুবশাহী রাজত্বে বিজ্ঞানের বিশেষ করে শব্দ বিজ্ঞানের অসামান্য উন্নতি হয়েছিল।অসংখ্য ডায়মন্ড কাট গম্বুজ, শব্দের প্রতিধ্বনিকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলত। সেজন্যই আমরা ফতেহ দরওয়াজার নিচে দাঁড়িয়ে হাততালি দিলে শব্দ বিজ্ঞানের প্রয়োগে দুর্গের সর্বোচ্চ স্থান বালা হিসারে সে শব্দ আরো জোরে শুনতে পাই।এই ডায়মন্ড কাট সিলিংয়ের প্রয়োগ আরো অনেক জায়গায় দেখতে পাবেন। এমন কি সুলতানদের সমাধি ক্ষেত্রের দি গ্রেট মস্ক এ গিয়েও এই শব্দ বিজ্ঞানের প্রয়োগ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
এছাড়াও দুর্গের জল সরবরাহ ব্যাবস্থা এবং প্রাকৃতিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের অসামান্য প্রয়োগ কৌশল দেখলে চমৎকৃত হতে হয়।
মুসলিম শিয়া সম্রাট আর হিন্দু তেলেগু প্রজাদের মধ্যে কিন্তু অত্যন্ত সু সম্পর্কই ছিল। তবে সেই সময়ে ভারতবর্ষ শুধু নয়, সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা বিজয়নগর বা হ্যাম্পি সাম্রাজ্যের উন্নতিকে ধ্বংস করার জন্য দক্ষিণাত্যের সমস্ত সুলতানেরা মিলিতভাবে ১৫৬৫ সালে যে অভিযান চালান, তাতে কুতুব শাহী সম্রাটরাও যোগ দিয়েছিলেন। যাকগে রাজা-রাজার লড়াই তো ভারতবর্ষের ইতিহাসে লেগেই থাকত।
এরপর আসছি কুতুবশাহী রাজবংশের কিছু বিশেষ অবদানের কথায়।
আসছি এই রাজবংশের তৃতীয় সুলতান ইব্রাহিম কুলি কুতুব শাহের কথায়। তৃতীয় সুলতান, দ্বিতীয় সুলতান- তাঁর বড় ভাই জামশিদ কুলি কুতুবের ভয়ে মাত্র তেরো বছর বয়সে দেশান্তরী হয়ে বিজয়নগর রাজ রামা রাওয়ের কাছে আশ্রয় নেন।১৫৪৩ থেকে ১৫৫০ সাল অবধি রামা রাওয়ের কাছে পুত্রবত থেকে সংস্কৃত এবং তেলেগু ভাষা শিক্ষা করেন এবং দুটি ভাষাতেই দক্ষ হয়ে ওঠেন।১৫৫০ সালে দ্বিতীয় সুলতানের সম্ভবত ক্যান্সারে মৃত্যু হলে, উনি তৃতীয় সুলতান হয়ে গোলকুন্ডা ফিরে আসেন। কিন্তু সুলতান ততদিনে তেলেগু ভাষাকে এতই ভালোবেসে ফেলেছিলেন যে একদিকে ৩০ বছর ধরে তিনি সুলতান হয়ে রাজ্যপাট সামলাচ্ছেন, অন্যদিকে আবার রাতের বেলায় রেড়ির তেলের আলোয় চলেছে তাঁর সাহিত্যিক জীবন। "মালকিভাড়ামু" নাম নিয়ে তিনি অসংখ্য , অসামান্য তেলেগু কবিতা রচনা করেছেন। এমন কি তাঁর সভাকবিও ছিলেন বিখ্যাত তেলেগু কবি 'গঙ্গাধর কবি'। তাঁর প্রজাদের কাছে তিনি ছিলেন তাঁদের প্রিয় " মালিক ইব্রাহিম"। আর কুতুবশাহী রাজবংশের রাজাদের নামই হয়ে গেছিল তেলেগু সুলতান বলে।বর্তমান সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে কেমন আশ্চর্য গল্প কথার মতন শোনাচ্ছে ,তাই না !
ইব্রাহিম কুলি কুতুবের পুত্র কুলি কুতুব শাহ। ওই যে বলে না বাপ কা বেটা, সিপাহী কি ঘোড়া, একদম ঠিক তাই। ছোট থেকে চুপচাপ, একা একা ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ান। আর অবসর সময়ে বাবার মতনই কি সব লিখে যান।দু-একটা উদাহরণ দিচ্ছি-
"পিয়া বাজ পিয়ালা পিয়া যায়না,
পিয়া বাজ ইয়ক-তিল জিয়া যায়না।"
অথবা: "হামারে সাজন খুশ- নজর বাজ হায়
তো উস দিল মে সাব ইসক কি রাজ হায়।"
ভাবা যায় এক সম্রাটের লেখা এটি!
১৫৮০ থেকে ১৬১১ সাল অবধি তিনি চতুর্থ কুতুবশাহী সম্রাট হিসাবে গোলকুন্ডা রাজ সামলেছেন, আবার সঙ্গে সঙ্গে উৎকৃষ্ট ডেকানি(দাক্ষিণাত্যের উর্দু, উনিই প্রথম কবি), পারসিক, তেলেগু এবং চোস্ত উর্দুতে রচনা করে চলেছেন একের পর এক কবিতা, শের-সায়ারী ইত্যাদি। উনার রচিত শের-সায়ারীর সংখ্যা কম করে হবে পঞ্চাশ হাজার।
তখন তিনি মাত্র চোদ্দ বছরের রাজপুত্র। আগেই বলেছি কবিতা লেখা এবং ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে দেখা ছিল তাঁর নেশা।এরকমই একদিন মুসা নদীর পার ধরে আনমনে চলেছেন, দেখলেন যে অনেকেই সেজেগুজে মুসা নদীর ওপর নড়বড়ে কাঠের সেতু পেরিয়ে চলেছে ওপারে।কৌতুহলের বশে কয়েকজন কে প্রশ্ন করে জানলেন যে নদীর উল্টোদিকের স্থানটির নাম যুক্তপুরা। এখানে একটি গ্রাম আছে চিচলাম বলে।এই গ্রামে নাকি এক রূপসী নর্তকী আছেন, অসাধারণ কুঁচিপুড়ি নাচ করেন। কোন মানবীর পক্ষে নাকি সেই স্বর্গীয় নাচ করা সম্ভব নয়। উনি নিশ্চয়ই কোন শাপভ্রষ্টা দেবী, স্থানীয় মন্দিরে আজ সেই দেবী নাচবেন তো এঁরা চলেছেন তাঁর নাচ দেখতে।
কি ভেবে কিশোর রাজপুত্র তাঁদের সঙ্গ নিলেন, পৌঁছলেন নাচের অঙ্গনে।
সেই মেয়ে, নাম তার ভাগ্যমতি, সে তো নিজের ছন্দে নেচেই চলেছেন।বয়স তাঁর এই ২০/২১ হবে, তাঁর কাজল টানা চোখে আগুন, আর বহ্নিশিখার মতন তাঁর সৌন্দর্য। সেই বহ্নি শিখায় ঝলসে গেল ১৪ বছরের রাজপুত্রের মন-প্রাণ।
শুরু হল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। ভাগমতির নাচ দেখার জন্য আর কোন ব্যক্তির প্রবেশাধিকার রইলো না। এখন থেকে স্রেফ রাজপুত্রের জন্যই ভাগমতি তাঁর মন প্রাণ ঢেলে নাচ করেন আর সেই নাচের ছন্দে, গানের গলায়, রাজপুত্র উন্মাদ প্রায়।
স্বয়ং সুলতান থেকে পাত্র-মিত্র-অমাত্য সবাই ব্যার্থ হলেন রাজপুত্রের এই অভিসার বন্ধ করতে। এমন অবস্থা দাঁড়িয়ে ছিল যে একবার মুসা নদীতে ভয়ঙ্কর বান এসেছে শুনে পাগলের মতন ঘোড়া ছুটিয়ে ভাগ্যমতির কাছে পৌঁছনোর জন্য ঘোড়া শুদ্ধ নদীতে ঝাঁপ দেন। সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। শোনা যায়, এ ঘটনার পরে সুলতান ইব্রাহিম পুত্রের যাতায়াতের জন্য মুসা নদীর ওপর পাথরের তৈরি প্রথম সেতু তৈরি করেন যার নাম পুরানা পুল। এখানে উল্লেখযোগ্য যে রাজপুত্রের মাতাও বিবাহের আগে ছিলেন ভাগীরথী নামক এক হিন্দু নারী।
সুলতান ইব্রাহিমের মৃত্যু হলে ১৫৮০ সালে সিংহাসনে বসেন মহম্মদ কুলি কুতুব শাহ।সুলতান হয়ে তিনি এক অবিশ্বাস্য কাজ করেন। তাঁর পরিবারের, আমীর ওমরাহদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে তাঁর থেকে বয়সে বড়, অসামান্য রূপসী, নৃত্যপটিয়সী ভাগমতি কে বিবাহ করেন।স্ত্রী কে দেওয়া তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার ছিল এক নতুন শহরের পত্তন- ভাগ্যনগর। ভাগমতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাঁর নাম হয় 'হায়দার মহল' এবং নতুন শহরের নাম হয় হায়দরাবাদ।
কুলি কুতুব শাহের মৃত্যু ঘটলো ১৬১১ সালে। কি আশ্চর্য ঘটনা ভাগমতির ও মৃত্যু হল সে বছরেই।একের বিরহ ব্যাথা অন্যকে বেশিদিন সহ্য করতে হয় নি।
তারপর কি হলো দেখতে চলুন কুতবশাহী টম্বে। অনেকে এটিকে সাত গম্বুজ মকবরাও বলে থাকেন।
গোলকুন্ডা ফোর্টের বানজারা দরওয়াজা থেকে সামান্য দূরেই অবস্থিত কুতুবশাহী সমাধির অসামান্য কবর সৌধগুলি।জায়গাটির নাম ইব্রাহিম বাগ( ফোর্ট রোড, তলি চৌকি)।মন্ত্রমুগ্ধের মতন তাকিয়ে থাকবেন এই জায়গাটিতে এলে। কবর স্থানও এত সুন্দর করে, এত যত্ন সহকারে তৈরি হতে পারে! তাজমহলের কথা বাদ দিচ্ছি, সেখানে লোকদেখানো গ্রান্জার বেশি। কিন্তু এখানে এই নিভৃতে-নিরালায় কুতুবশাহী সুলতানেরা তাঁদের জীবিত কালেই তিল তিল করে ইহজন্মের ভালোবাসায় সিক্ত করে তৈরি করেন তাঁদের মৃত্যুর পরের বাসস্থান গুলিকে। ইন্দো-সারাসিনিক রীতিতে নির্মিত এই অসাধারণ সৌধগুলির শিল্প সুষমা না দেখলে বিশ্বাসই হবে না- এগুলি কত সুন্দর! সমাধি, বাগান, মসজিদ, হামাম - ৪০ টি সমাধি, ২৩ টি মসজিদ এবং ৫ টি আলাদা আলাদা দেওয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা এই কপ্লেক্সটির মোট আয়তন ১০৬ একর। এই বিশাল স্থানটিতে সম্রাট এবং তাঁদের বেগমদের সঙ্গে আরো অনেক পরিজন, হাকিমি চিকিৎসক এমন কি সম্রাটের রাজদরবারের নর্তকী বা গায়িকাদের অবধি অনেকের সমাধি আছে। খুব কমজায়গাই এমন আছে যেখানে রাজবংশের পুরো খানদান এমন ভাবে এক জায়গাতেই সমাহিত রয়েছেন।
ছোট সমাধির গ্যালারিগুলি দেখছি একতলা এবং বড় সমাধিগুলির দোতলা। সমাধির ডোমগুলি একসময় পারস্য থেকে আনা সবুজ এবং নীলরঙের টালি দিয়ে অলঙ্কৃত ছিল। বর্তমানে তার সামান্য অংশই বেঁচে আছে।
২০১৮ সালে ১০ টাকার প্রবেশমূল্য এবং ২০ টাকা ক্যামেরা চার্জ লাগত এখানে প্রবেশ করতে। এই স্থানটির রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হয়েছে আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার এবং টাটা ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকেই প্রথমে বাঁ দিকে পড়বে সাইট এক্সিবিশন হল। এখান থেকে বেরিয়ে সামান্য দূরে ডানদিকে চোখে পড়বে কুতুবশাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা বড়ে মালিক বা সুলতান কুলি কুতুব শাহের (রাজত্বকাল ১৫১৮- ১৫৪৩) সমাধি সৌধ। বিশাল জায়গা জুড়ে, উঁচু ভিতের ওপর অবস্থিত এই অসাধারণ সৌধটি মনে এক অপার্থিব অনুভুতি নিয়ে এলো। সৌধটির বাইরের আয়তন চারদিকে ৩০ মিটার করে, মূল সমাধিগৃহের আয়তন বর্গাকার, ১০ মিটার প্রতি দিক।
সৌধটির অন্দরে তিনটি কবর এবং চাতালে আরো ২১ টি কবর আছে। সুলতানের তিন ধাপে নির্মিত সমাধি বেদির উপরে শুনলাম Naskh এবং Tauq - দুটি বিশেষ ইসলামিক হরফে কিছু লেখা আছে। উনার সমাধির চাতালেই রয়েছে উনার নাতি এবং মাত্র ২ বছরের জন্য সম্রাট বনা জামশিদ পুত্র সুবহান কুলি কুতুব শাহের সমাধি।
প্রথম সম্রাটের সমাধিটির ঠিক পরেই হচ্ছে উনার পুত্র এবং ঘাতক দ্বিতীয় সুলতান জামশিদ কুলি কুতুবের দোতলা সমাধি( ১৫৪৩-১৫৫০)। এটি তৈরি করেন উনি ১৫৫০ সালে এবং সে বছরই বলা হয় সম্ভবত ক্যান্সারে পিতৃঘাতি সম্রাটের মৃত্যু হয়।
৩য় সম্রাট ইব্রাহিমের সমাধি।
ছবি WIKIMEDIA COMMONS.
এই সমাধি ক্ষেত্রের সর্বপ্রেক্ষা বৃহৎ কবরসৌধটি হচ্ছে ছোটে মালিক বা তৃতীয় সুলতান ইব্রাহিম কুলি কুতুব(১৫৫২-১৫৮০) বা তেলেগু সাহিত্যের বিখ্যাত লেখক 'মালকিভাড়ামু'র। এটিও তৈরি হয় উনার মৃত্যুর বছরে-১৫৮০ সালে। এই সমাধি সৌধের মধ্যে দুটি এবং চাতালে আরো ষোলটি পারিবারিক সমাধি আছে। এই সৌধটিতেই দক্ষিণ দেওয়ালে সামান্য পরিমানে নীল সবুজ রঙের আদি এনামেল টাইলস এখনও বেঁচে আছে। মূল সৌধের মধ্যে দুটি এবং বাইরে ১৬ টি কবর দেখা যাচ্ছে। শুনলাম উনার সমাধি বেদির উপরে একটি বিশেষ (Thuluth) ইসলামিক হরফে কিছু লেখা আছে।
চতুর্থ সুলতান মহম্মদ কুলি কুতুব শাহের(১৫৮০-১৬১২) সমাধি সৌধটি সর্বপ্রেক্ষা সুন্দর দর্শন। ১৬০২ সালে নির্মিত প্রেমিক কবির উপযুক্ত সমাধিই বটে। এই সমাধির স্থাপত্যে বিশেষ করে স্তম্ভগুলি এবং লিনটনের কাজের মধ্যে সর্বাধিক হিন্দু স্থাপত্যের প্রভাব চোখে পড়ে। বাইরে এই বর্গাকার সমাধির প্রতিদিকের দৈর্ঘ্য ২২ মিটার করে, ভিতরে এটি প্রতিদিক ১১ মিটার দীর্ঘ। সুলতানের সমাধি কিন্তু টেরেসের নিচে রয়েছে। পারসিক এবং Naskh হরফে অলঙ্কৃত।
আরো রয়েছে পঞ্চম সম্রাট বা মহাম্মদ কুতুব শা(১৬১২-১৬২৬) এবং ষষ্ঠ সম্রাট আব্দুল্লাহ কুতুব শা(১৬২৬-১৬৭২)র চমৎকার সমাধি।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে পঞ্চম সুলতান, হচ্ছেন হায়াৎ বক্সীর স্বামী, কুলি কুতুবের জামাই মহম্মদ কুতুব শাহ এবং উনার পুত্রই হচ্ছেন ষষ্ঠ সুলতান আবদুল্লা কুতুব শাহ।
হায়াৎ বক্সী বেগমের সমাধি। ছবি-লেখক।
দা গ্রেট মস্ক। ছবি- লেখক।
আরো যেসব অসামান্য সমাধি চোখে পড়ল সেগুলি হচ্ছে মহম্মদ কুলি কুতুব শাহ এবং সম্ভবত ভাগমতির একমাত্র কন্যা হায়াৎ বক্সী বেগমের অসাধারন কবর সৌধ এবং সংযুক্ত মসজিদ টি(দি গ্রেট মস্ক)। আরো যেসব সমাধি চোখে পড়লো পঞ্চম সুলতানের ভগিনী ফাতিমা সুলতান, সপ্তম বা শেষ সম্রাট আব্দুল হাসান তানা শাহের অসমাপ্ত সমাধি- চৌখন্ডি ।উনার সমাধিটি অসমাপ্ত কারণ আওরঙ্গজেবের হাতে বন্দি হয়ে দৌলতাবাদ দুর্গে বন্দি থাকা কালীন উনার মৃত্যু হয় এবং দৌলতাবাদ দুর্গেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। এখানে অবশ্য একটি কবর আছে, যেটি ষষ্ঠ সুলতানের জামাই মির আহমেদের।
উনার অসমাপ্ত সমাধির প্রাঙ্গনে আরেকটি অসমাপ্ত ছাদ বিহীন কবর আছে, মির আহমেদের স্ত্রী এবং ষষ্ট সুলতান আব্দুল্লা কুতুব শাহের কন্যা ফতিমা খানামের।
কুতুবশাহী পরিবারের সদস্যদের বাইরে যাঁদের সমাধি এখানে দেখা যায় তাঁরা হচ্ছেন ষষ্ঠ সুলতান আবদুল্লা কুতুব শাহের গায়িকা প্রেমিকা তারামতি এবং তারামতির নৃত্যপটিয়সি বোন প্রেমামতির জোড়া সমাধি। আর আছে সুলতান আব্দুল্লার দুজন হাকিমি চিকিৎসক নিজামুদ্দিন আমেদ গিলানী ও আবদুল জব্বর গিলানীর চমৎকার দুটি সমাধি। নেকনাম খান ছিলেন ষষ্ঠ সুলতানের সেনাপতি, উনার সমাধিও এখানেই আছে।
আগেই লিখেছি এই স্থানে সর্বমোট ২৩ টি মজজিদ আছে। প্রায় প্রতিটি সমাধির সঙ্গেই একটি মসজিদ জুড়ে আছে। এদের মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর মসজিদ হচ্ছে ১৬৬৬ সালে হায়াৎ বক্সী বেগম দ্বারা নির্মিত দা গ্রেট মাস্ক। এমনকি সম্রাট আওরঙ্গজেব গোলকুন্ডা দুর্গ ধ্বংস করলেও , এই স্থানে একটি ক্ষুদ্র মসজিদ নির্মাণ করেন। বিশাল প্রাঙ্গনের পশ্চিম দিকে রয়েছে সুফি সাধক হুসেন শা-র দরগা। মনে রাখতে হবে আজকের হায়দরাবাদ শহরের অন্যতম মধ্যমনি হুসেন সাগরের নির্মাণ কিন্তু ১৫৬২ সালে এই মহাত্মার হাতেই হয়েছিল।
কিন্তু এত কিছুর মধ্যে ভাগমতি কোথায় ? না কোথাও কুতুবশাহী সমাধির মধ্যে ভাগমতির কোন চিন্হ চোখে পড়লো না। তাঁর স্বামীর সমাধি আছে, মেয়ের সমাধি আছে, এমন কি গায়িকা তারামতি ও নৃত্যপটিয়সি প্রেমামতির অবধি সমাধি আছে, কিন্তু আমরা জানিনা, ভাগমতির মৃত্যুর পরে কোথায় গেল তাঁর মরদেহ ?
ঠিক কি ঘটেছিল তাঁর মরদেহ নিয়ে।ভারতীয় এবং ইসলামিক আর্ট বিশেষজ্ঞ জিয়াউদ্দিন আহমেদ শাকিবের মতে " মীর মোমিন দা পেশোয়া(প্রাইম মিনিস্টার) অফ মহম্মদ কুলী ডিড নট এপ্রিসিয়েট দা ক্লোজনেস বিটুইন দা সুলতান এন্ড ভাগমতি। দেয়ার ফোর, হি ডিসাইডেড টু এনসিওর দেট ভাগমতি'স ক্যারেক্টার ইস ড্রাইভেন আউট অফ কনটেম্পোরারি হিস্ট্রি, সো মাচ সো দেট শি ডিড নট ইভেন হেড এ টম্ব বিল্ট ওভার হার লাস্ট রিমইন্স।"
হায় রে ভাগমতি, হায় রে সম্রাট কুলি কুতুব শাহ।সারা ভারতের আকাশে- বাতাসে অমর হয়ে আছে তোমাদের প্রেমকাহিনী। তোমরা বেঁচে আছো , বেঁচে থাকবে- আমাদের মনে, সংগীতে , লোকগাঁথায়, শিল্পীর কলমে/ছবিতে, নাটকে। কোন নৃশংস উন্মাদের ক্ষমতাও নেই এই অমর প্রেমকথা কে মুছে দিতে পারে।
পরিশিষ্ঠ : না ভুল বললাম, শত শত বছর ধরে চলে আসা প্রেমগাঁথাকে হটাৎ করে নস্যাৎ করে দিয়ে দুই ভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে , রাজনৈতিক খেলায় মেতে উঠেছেন। লড়াইয়ের নির্যাস হচ্ছে , ভাগমতির কোন সমাধি যখন খুঁজে পাওয়া যায়নি, তখন এরকম কোন চরিত্রের অস্তিত্বের কল্পনা করা স্রেফ গাঁজাখুরি গল্প ছাড়া কিছু নয় , একপক্ষ বলছে ভাগমতি থেকে নয়, ভাগ্যনগর বলতে তখন সৌভাগ্যের নগর বোঝান হয়েছিল। অনেক সেকুলার দল এবং নামি ঐতিহাসিকরা তো এমন সন্দেহও করেন যে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায় ভাগ্যমতির কাহিনী আমদানি করেছিল। শত শত বছর ধরে চলে আসা প্রেমগাঁথা , চারণকবিদের গান, শিল্পীর তুলিতে আঁকা চিত্র কথা সব মিথ্যে।
অথচ এই প্রেমকাহিনী নিয়ে কিছুদিন আগেই হায়দরাবাদের বিখ্যাত নাট্যকার মোহাম্মদ আলী বেগ রচনা করেছেন তাঁর বিখ্যাত নাটক-
" Dilon-ka-Shehzaada".
তিনিও রাজনৈতিক নেতাদের সম্মন্ধে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মন্তব্য করেছেন-" Whether Bhagmati existed or not has no bearing on the name of a city. The controversy is only a part of a clear political agenda. "
২০০৫ সালে বলিউডের ক্লাসিক ছবি Bhagmati- The Queen of Fortunes এ হেমা মালিনীর নাচের সঙ্গে বশির বদরের লিরিক্স, বিশাল ভরদ্বাজের সুরে, অসাধারণ গান গেয়েছেন রেখা ভরদ্বাজ। এই সিনেমার মেরি জান গানটিকে তো একটি চিরকালীন ক্লাসিক গান বলে অনেকেই বর্ণনা করেছেন -
Meri jan meri
Jan meri jan
Hay dekhna dildar
Taro ki atari mein
Mere naina ke dono
Bat khule hain intezaari mein
Meri jan meri jan meri jan.
সত্য সেলুকাস ! কি বিচিত্র এই দেশ। রোমিও- জুলিয়েট, লায়লা-মজনু সব চিরন্তন প্রেম কাহিনী চিরকাল শাশ্বত প্রেমের বাণী বহন করে এসেছে, একটিও তর্জনী কেউ ওঠায়নি, এই চরিত্রগুলি নিয়ে। বাংলাতেও মনসামঙ্গল কাব্যে বর্ণিত বেহুলা- লখিন্দরের কাহিনী চিরকাল আপামর বাঙালির মনে অমর প্রেমের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। আজ মহাম্মদ কুলী কুতুব ও ভাগ্যমতির প্রেমকথাকে কেন লাশকাটা ঘরে নিয়ে গিয়ে ইতিহাসের আতস কাঁচের নীচে কাটা-ছেঁঁড়ার দরকার পড়ল জানিনা।
এও জানিনা রাজনীতির কারবারিদের কি অধিকার আছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রেম ও বিশ্বাসের উপর, ধর্মীয় কুঠারের দ্বারা আঘাত করার। যদি কুলি কুতুব আর ভাগমতি/হায়দারি বেগমের কাহিনীর কোন অস্তিত্ব নেই, তবে গোলকুণ্ডা ফোর্টের লাইট এন্ড সাউন্ড অনুষ্ঠানে কেন বলিউডের খানদানি অভিনেতাদের ব্যারিটন ভয়েসে এই কাহিনী শোনান হয় ?
দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে যেসব যুক্তিবাদী লোক একদা রানী ভাগমতিকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, তাঁরাও অকস্মাৎ নিজেদের অবস্থান বদলে নামি দামি ব্লগ থেকে নিজেদের আগের লেখাগুলি উঠিয়ে নিয়েছেন। কিছুদিন আগেও যে লেখাগুলি জ্বল জ্বল করে শোভা পাচ্ছিল, আজ সেই লেখাগুলি আর খুঁজে পেলাম না।
হায়দরাবাদ শহরে, অন্ধ্র প্রদেশ মিউজিয়াম অফ আর্ট, যদি ঘুরে দেখেন তবে রানী ভাগমতির প্রচুর পেইন্টিং চোখে পড়বে, এর মধ্যে একটি অষ্টাদশ শতকে আঁকা ছবিও আছে ।
ভাগ্যমতির ট্র্যাজিক ভাগ্য নিয়ে একটি অসাধারণ লেখা পড়লাম সোহেল হাশমির-" The love story of Quli Qutub and Bhagmati, and other tragic endings. "
ভাগ্যমতির নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার জন্য দুই সম্প্রদায় কিভাবে সমবেত ভাবে চেষ্টা করেছে, চমৎকার বিশ্লেষণ করে দেখান হয়েছে এতে। একজন নাচনেওয়ালি বেগম হয়েছেন, তাঁর নাম থেকেই পরবর্তী কালে প্রথমে ভাগ্যনগর এবং পরে হায়দরাবাদ শহরের নাম হয়েছে , এতে সম্রাট কুলি কুতুব শা-র কোন অসুবিধা না থাকলেও, আধুনিক যুগে দুই সম্প্রদায়ের হজম করে মুশকিল হয়ে গেছে। তাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে আধুনিক মনস্ক পন্ডিতেরা যেমন ভাগ্যমতির অস্তিত্বই অস্বীকার করেন, তেমনি জানা গেল সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ও রাতারাতি (১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি) চারমিনারের একটি স্তম্ভের মধ্যে ভাগ্যলক্ষ্মী বলে এক কাল্পনিক দেবীর মূর্তি বসিয়ে দিয়ে শেষমেশ একটা মন্দির অবধি বানিয়ে ফেললো। রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার, এ এস আই কেউ দেখেও দেখলো না। দাবি উঠল দেবী ভাগ্যলক্ষ্মী হচ্ছেন প্রাচীন এক দেবী, উনার নাম থেকেই শহরের নাম হয়েছিল- ভাগ্যনগর। দুই যুযুধ্যমান পক্ষই ভাগমতিকে অস্বীকার করল। এই সুযোগে অনেক পন্ডিত ও ঐতিহাসিক ভাগমতিকে বোল্ড আউট করতে, শেষ অবধি দেবীর গল্পকেই লুফে নিল।
Soyel Hashmi র মূল্যবান লেখাটির শেষ লাইন উদ্ধৃত করে আমার বক্তব্য শেষ করছি-
" And so this is another love story that has been vitiated by those who thrive on hate."
তথ্যসূত্র:- 1. Hyderabad History-Old Kingdoms to modern times.Illustrated with Maps & Photos. hyderabadPlanet.com
2) Ishq Namah : Banaam Quli Qutub Shah- Urdu Shayari I https:/ blog.rekhta.org
3) The love story of Quli Qutub and Bhagmati, and other tragic endings. Sohail Hashmi.( First published in Terrascape.)
https:// kafila.online>2013/03/04
https://kafila.online/2013/03/ 04/the-love-story-of-quli- qutub-and-bhagmati-and-other- tragic-endings/
5) History of Hyderabad. Wikipedia.
6) হায়াৎ বক্সী বেগম যে ভাগমতির কন্যা এই তথ্যটি পেয়েছিলাম স্থানীয় গাইড এবং Absorbing Love story of Rani Bhagmati who married the Sultan of Golconda. লেখাটিতে।
7) For Hyderabad, Bhagmati is vital part of history. Mir Ayoob Ali Khan l TNN I Mar 22, 2010.
https:/m.timesofindia.com/ city/hyderabad/articles how/5709733.cms